শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়

মানব শিশুরা, যারা সদ্য এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা রুগ্ন বা স্বাস্থ্যহীন তাদের সুস্থ রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত। শিশুপালন ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়ে প্রত্যেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসককিছু কিছু মত প্রণয়ন করেছেন।

শিশুর জন্মদিনে সংস্কার

*** শিশুর জন্ম হওয়ার পরে তার স্বাস্থ্য রক্ষার ভার পড়ে দিদিমা ও ঠাকুমার উপর। জন্মের পর শরীর পরিষ্কার করা ও নাভির ছেদন প্রথম কর্তব্য তানার্স ও ধাই এরা করে থাকেন। সাধারণ গ্রাম অঞ্চলে, দিদিমা, ঠাকুরমা, মাসিমা, পিসিমার হাতেও পরবর্তীকালে শিশুর লালন-পালন ও স্বাস্থ্য রক্ষার ভার পড়ে। প্রসবান্তে মা-শিশু সেবায় অক্ষম থাকে, শিশুকে দুধ দেওয়াই তখন একমাত্র কাজ। তখন শিশুর সঙ্গে মায়ের শুশ্রূষার ও স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা অভিভাবকদের করতে হবে। পূর্ণ তিন মাস পরে মা শিশুর লালন-পালনের ভার নিতে পারে। শিশুর জন্ম দিনের সংস্কার অর্থাৎ শিশু যাতে স্বাস্থবান, বুদ্ধিমান, বিদ্যাবান ও সুন্দর হয়ে পৃথিবীর সেবা করে ধন্য হতে পারে তার জন্য জন্মের দিনই তাকে সাহায্য করা উচিত।

**** ধাত্রী সদ্যোজাত শিশুকে কোলে তুলে নেবে, তারপর অন্য কোন স্ত্রী যার হাত পরিষ্কার, গাত্র স্বচ্ছ, অঙ্গুলের নখ কাটা, সুস্থ শরীর ও মন, শিশুর প্রসবকালীন কষ্ট দূর করবার জন্য শিশুর গাত্রে সামান্য তৈল মর্দন করে, সমস্ত শরীরে অল্প অল্প শীতল জল দ্বারা ধুয়ে, পাতলা ও নরম কাপড়ে মুছিয়ে দিবে। পরে শীতকাল হলে গরম সুতিবস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত করতে হবে এবং গরমকাল হলে পাখা দ্বারা মৃদু হাওয়া করতে হবে। এইভাবে এর ঘন্টা পরে তার মুখের তালু ওষ্ঠ কন্ঠ জ্বিহা স্বচ্ছ তুলা দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।

*** শিশুকে শুষ্ক, পরিচ্ছন্ন, আলোক ও বায়ু যুক্ত বৃহৎ কামরায় রাখতে হবে। প্রসূতির শয়ন, আহার, নিদ্রা, পায়খানা ও প্রস্রাব করার ব্যবস্থা সুচারুরূপে করতে হবে। শিশুকে প্রসূতি গৃহে এক মাস পর্যন্ত রাখতে হবে। পড়ে শিশুর পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য রক্ষার ভার মাতার উপর দিতে হবে।

*** ঠিক সময়ে শিশুকে স্নান করানো, পরিমিত ও সময়মতো খাদ্য-পানীয় প্রদান, গায়ে তেল মালিশ করা, পায়খানা ও প্রস্রাব পরিষ্কার করা, সবুজ ও হালকা বস্ত্র পরিধান করানো ইত্যাদির প্রতি মাতা ও ধাই লক্ষ্য রাখবে । কোন প্রকারে শরীর অসুস্থ হলে অভিভাবক বা চিকিৎসককে জানাতে হবে.

*** শিশুকে আদর করে যেন অনেক লোকে কোলে না নেয়। তাতে তার শরীর খারাপ হবে। স্বভাব রুক্ষ হয়ে যাবে, একলা থাকতে চাইবেন না।

*** শিশুকে অকারণে ঔষধ খাওয়ানো উচিত নয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জন্মঘুঁটি ব্যতীত অন্য ঔষধ দেওয়া উচিত নয়। জন্ম গুটি জন্ম সময় হতে 10 বছর পর্যন্ত পরিমিত মাত্রায় শিশুকে খাওয়ালে উপকার হয়ে থাকে,ইহা সাধারণ পেটের রোগে বিশেষ উপকারী.

*** দুগ্ধপায়ী শিশুর মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকা শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী। এইজন্য মাকে সাধারণত সর্বপ্রকার স্বাস্থ্যনীতি পালন করে চলতে হবে। তা না হলে শিশুর যত্ন নিলেও মায়ের দুগ্ধ পান করে শিশু রুগ্ন হয়ে পড়বে।

*** শিশুর গায়ে তেল মালিশ করার সময় তেলের সঙ্গে হলদির রস, নিম পাতার রস অথবা ত্রিফলা চূর্ণ ও তিলের খৈল বাটা মাখিয়ে নিলে শরীর কোমল, উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে। মাঝে মাঝে ব্রাহ্মী শাকের রস মধু দিয়ে খাওয়ালে শিশুর স্মৃতিশক্তি প্রবল হবে। মাঝে মাঝে শিশুর চুল মুছে ফেলে দিলে তাতে ভৃঙ্গরাজের রস মালিশ করলে চুল সুন্দর ও স্মৃতিশক্তি বর্ধিত হবে। শিশুর গায়ে সাবান দিয়ে বিশুদ্ধ মুলতানি মাটি ও তিল বাটা দ্বারা শরীর মর্দন করে দিতে হবে। গামছা দ্বারা গামোছাইয়া বেবি পাউডার লাগাতে হবে।

*** শিশুদের হেঁটে বেড়াবার সময় হলে তাকে একটু চলাফেরা করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে তিন চাকার ঠেলা পেরাম্বুলেটার তৈরি করে দিতে হবে তা ধরে শিশুর চলতে শিখবে। চলাফেরা শরীর বৃদ্ধি হওয়া ও ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন।

*** আজকাল তিন থেকে চার বছর বয়স হলে শিশুকে লেখাপড়া শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাতে শিশুর সময় কেটে যাবে এবং লেখা পড়ার অভ্যাস হবে। 5 বৎসর হলে নিয়মিত স্কুলে পাঠানো উচিত কিন্তু তার যেটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকুই পড়তে দেওয়া উচিত। কারণ লেখাপড়া করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও তাকে আদর করে কিছু সময় পাঠশালায় বসিয়ে রেখে পরে নিয়ে আসতে হবে তা না হলে তার মন বসবে না এবং স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়বে। তার মনের আনন্দ নষ্ট হবে।

*** ক্রমে ক্রমে পড়াশোনার সঙ্গে বালকের স্বাস্থ্যরক্ষা সাধারণ নিয়ম গুলি, যেমন সময়মতো শয়ন করা, সময়মতো ওঠা, মুখ ধোয়া, প্রাতঃকালে খাওয়া, পড়তে বসা, খেলতে যাওয়া, স্নান করা ইত্যাদি। তার দৈনন্দিন ভোজন ও মলত্যাগের বিষয়ে মাতা-পিতার খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন । কারণ পায়খানা পরিষ্কার না হলে কৃমি ও কোষ্ঠবদ্ধতা হয়ে স্বাস্থ্যের হানি হতে পারে। কোন কারনে কম খেলে এবং বেশি খেলে শরীরের উপর তার প্রভাব পড়তে পারে, এইজন্য 7 থেকে 8 বছর বয়স পর্যন্ত বালক-বালিকাদের খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট তালিকা ও সময়সূচি থাকবে। তাদের বাইরের খাদ্য খেতে দেওয়া উচিত নয়। সারাদিন কেবল খেলে শরীর ভালো থাকে না।

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *