দৈনন্দিন আহার সম্বন্ধে পালনীয় কয়েকটি বিষয়

ধীরে ও চিবিয়ে খাওয়া উচিত

(১) ধীরে ধীরে অনেকবার চিবিয়ে, মুখের মধ্যকার আহার্য দ্রব্য বেশ কাদা কাদা মতো হবার পর গিলতে হয়। তরল দ্রব্য হলে একেবারে ঢকঢক করে না খেয়ে, অল্প চুমুক দিয়ে খেতে হয় এতে লালা রসের মিশ্রনে সুবিধা হয়।

(২) শক্ত জিনিস ছোটো ছোটো গ্রাসে ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে ভালোরূপ পিষ্ট এবং লালা মিশ্রিত হবে। লালা হাজমের পক্ষে একান্ত প্রয়োজন। ঠিকভাবে চিবনো হল কি না তার পরীক্ষা এই যে ঠিক করে খাওয়া হলে খাবার শেষে জল খাওয়ার দরকারই হয় না।

(৩) খাবার পরই জল খেতে নেই এর মানে এমন নয় যে, সমূহ পিপাসা উপস্থিত অথচ জল খেতে নেই, বরং পিপাসাই জল খাওয়াই নিয়ম। অর্থাৎ খাবার এমনভাবে খেতে হবে পিপাসার উদ্রেকেই যেন না হয়। একথার যথার্থ যে কেউ ভালোভাবে চিবিয়ে বেশ আস্তে আস্তে খেলেই তা বুঝতে পারবেন। পশু পাখির খাওয়া দেখলেই জানতে পারবেন, তারা খাবার সঙ্গে সঙ্গেই জল পান করে না। পরে অন্য কোনো সময় জল খাওয়ার কারণে তখন তাদের পিপাসার উদ্রেকেই হয় না। অতি গরম বা অতি শীতল দ্রব্য না খেয়ে নাতিশীতষ্ণ আহার্যই কাম্য।

মনে দুশ্চিন্তা নিয়ে খাওয়া উচিত নয়

(১) চিত্তের উদ্বীগ্ন অবস্থায় খেলে পাকরস নিঃসরণের ব্যাঘাত ঘটে, ফলে হাজমের ব্যাঘাত হয়। প্রসন্নচিত্তে ভোজন করা স্বাস্থ্যের অনুকূল। পথ চলতে চলতে খাওয়া, খাবার পর একটু বিশ্রাম না করা, অথবা শ্রমের পীর গলদঘর্ম অবস্থায় খাওয়া অত্যন্ত অনিষ্টকর।

(২) খাবার পর বিশ্রাম না করেই অফিস দৌড়ানো স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর নয়। সময় থাকতে খেয়ে অত্যান্ত 15 মিনিটকাল হলেও বিশ্রাম নেওয়া কর্তব্য।

(৩) একটু কম খাওয়া উচিত খুব পেট ভরে ভরে খেতে নেই। তিনভাগ উদর পূর্ণ করে একভাগ খালি থাকতে খাওয়ার বন্ধ করতে হয়। এতে ভুক্তদ্রব্য সহজে জীর্ণ হয়। নিমন্ত্রণ খেতে বসে অনেকেরই ই কথা মনে থাকে না। পেট ভরে খাওয়া ক্ষতিকারক জেনেও অনেকেই ই কথা গ্রাহ্যর মধ্যেই আনেন না। কিন্তু যাদের শরীর খারাপ হয়েছে তাঁরা এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারেন। অল্প ক্ষিদে রেখে খেলে শরীর দুর্বল হয় না বরং খাদ্য সুজির্ন হাওয়ার শরীর ভালোই থাকে। প্রবাদ আছে – “উনা ভাতে দুনা বল “।

(৪) সবসময় হজমশক্তির মাত্রা বুঝে ভোজন করবেন। অতিরিক্ত ভোজন যেমন অনিষ্টকর তেমন ক্ষিদের সময় না খাওয়াও তেমনই অনিষ্টকর।

মধ্যে মধ্যে উপবাস করুন

(১) মাঝে মাঝে উপোস দিলে পাকস্থলী বিশ্রাম পায় এবং তার কর্মশক্তিও অক্ষুন্ন থাকে। চন্দ্র সূর্যের গতি অনুসারে যেমন সমুদ্রে জোয়ার ভাটার বেগ কম বেশী হয়, শরীরের রসেও তেমন হয়ে থাকে। এই কারণে একাদশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা তিথিতে একবেলা কিছু লঘু আহার কড়া কর্তব্য। শরীরের অম্লাধিক্য এইভাবে উপোস দিলে উপশমিত হয়ে দেহগত উপাদানে সাম্যতা আনে। প্রবাদ আছে, দান নাক দিয়ে শ্বাস বাহনকালে আহার করা শ্রেয়, বাম নাকে শ্বাস বহনকালে জল মান করা উত্তম।

(২) এই সঙ্গে আরও জেনে রাখা দরকার যে, পাকস্থলীতে খাদ্য না পড়লে পাচকরস নিঃসৃত হয় না। পাকস্থলীতে যেমন খাদ্য পড়বে সঙ্গে সঙ্গে পাচকরসও পাকস্থলীর গা থেকে সেইভাবে বের হয়ে ভুক্ত দ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। উপসের অর্থ – খাদ্য গ্রহণ না করা। পেটে খাদ্যদ্রব্যের অনুপস্থিতি বশত খাদ্যের নিজের অম্লরস উৎপাদিত হচ্ছে না, উপরন্তু পাকস্থলী থেকে পাচক রস নিঃসৃত হচ্ছে না, ফলে অম্লরসের যোগানই বন্ধ হয়ে যায়, কাজেই স্বাভাবিক ক্ষার ধর্মই প্রবল হয়ে শরীর সুস্থ করে। অস্ত্রের ধার রক্ষা করতে যেমন শান দেওয়া হয় তেমনই উপোসও শরীরকে শরীরকে শানিয়ে রাখে। অর্থাৎ উপোসেই শরীরের ক্ষারত্ব বাড়ে।

(৩) আগেই বলেছি আমাদের শরীর প্রধানত ক্ষার ধর্মাবলম্বী। সুতরাং এমন সব খাদ্য খেতে হয় যাতে মোটের ওপর শরীরের খারাত্ব বজায় থাকে। কিন্ত দ্রব্যমাত্রেরোই, এমনকি চিনি মিচরিরও অম্লরস আছে, এজন্য এমন সব দ্রব্য একসঙ্গে খেতে হয় যাতে অম্লরস নষ্ট হতে পারে।

 

বিরুদ্ধ দ্রব্য ভোজন না করা

(১) যার সঙ্গে যার সংযোগ করা চলে না বা সংযুক্ত করে আহার করলে পরিণামে দেহের অনিষ্ট হয়, তাকেই বিরুদ্ধ আহার বলে। এরূপ বিরুদ্ধ দ্রব্য ভোজন করা অনুচিত। যেমন –

(২) দুধের সঙ্গে মাছ, গুড়, মধু, দুধ নিয়ে মাংস, তেল ভাজা পায়রার মাংস, মাসকলাই, মুগ সহ একত্রে পাক করা মাংস, মুলা রসুন বা সজনে শাক খেয়ে সেই পাতেই দুধ খাওয়া, নুনের সঙ্গে দুধ বা শাকের সঙ্গে তিল বাটা খাওয়া বিরুদ্ধ ভোজনেরই নামান্তর।

(৩) লবন ও জল মিশিয়ে দৈ খাওয়াই উচিত। কিন্তু দই, দুধ একত্রে খাওয়া শাস্ত্রের বিধাণ নয়।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *