প্রতিকার : দীর্ঘ দিনের পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়। সহজে একে যেন জব্দ করা যায় না। এই ক্ষেত্রে দুটো কমলালেবুর অথবা মৌসম্বির রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে চমকপ্রদ ফল পাওয়া যায়। টানা 8 থেকে 10 দিন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য একেবারেই দূর হবে।
ব্যবহারবিধি: ফলের রসে লবণ, বিট লবণ, কোন মশলা বস চিনি দেবেন না। রস খাওয়ার পরে অন্তত 2 ঘণ্টা কিছু না খাওয়ায় প্রশস্ত।
কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রশস্ত খাদ্য :
পালং এর শাক বা সুপ, মেথির শাক, বেথো শাক, পুদিনা, পেঁপে, টমাটো, গাজর, কাঁচা পেঁয়াজ, সবেদা, পেয়ারা, আমলকি, কমলালেবু, মুসুম্বি বা টাটকা ফলের রস, মনাক্কা ভেজানো দুধ, খেজুর, গরম দুধ, মাখন, ডুমুর, আঁশযুক্ত অন্যান্য সবজি ও ফল। যতটা গম তার একভাগ ছোলা মিশিয়ে আটা তৈরি করে তার রুটি, ভুষিসহ আটার রুটি,গম বা জবের ভুষির পায়েস,ভাজা ছোলার ছাতুর সরবত খাওয়া যেতে পারে।
অন্যান্য ঘরোয়া চিকিৎসা ও বিধি
(১) জল – কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীকে দিনে অন্তত: ৪ থেকে ৭ কেজি জল খাওয়ানো দরকার। সকালে খালি পেটে অন্তত: ৪ থেকে ৫ গ্লাস ঠান্ডা জল খেয়ে দিন আরম্ভ করতে হবে। রাতে শোয়ার এক ঘন্টা আগে দু গ্লাস জল খেয়ে উক্ত পরিমাণ পূর্ণ করতে হবে। দুপুরে ও রাত্রে খাবার একঘন্টা আগে সম্ভব হলে এক গ্লাস গরম জল খাবেন।
রাত্রে কাঁসার বড় ক্লাসে এক গ্লাস জল রেখে দেবেন। সকালে উঠে খালি পেটে গ্লাসের জল একটানে খেয়ে নেবেন। একে বলে উষাপান।
(২) আমলকি বেটে এক চামচ পরিমাণ হালকা গরম দুধে মিশিয়ে জল খাবারের সময় এবং রাতে দুধের বদলে জলের সঙ্গে দ্বিতীয় বার খেতে হবে। এতে চিনি মেশাবেন না।
(৩) রাতে শোয়ার সময় কয়েকটি খেজুর খেয়ে এক গ্লাস গরম জল খেতে হবে।
(৪) জলখাবারের সময় প্রতিদিন খানিকটা পাকা পেঁপে খাওয়া উচিত, সেইসঙ্গে এক গ্লাস দুধ।
(৫) দিন কয়েক একটা বা দুটো সবুজ টমেটো ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে
(৬) পেয়ারার মরসুমে জলখাবারের সময় একটি বা দুটি পেয়ারা খেতে হবে। আধঘন্টা পরে অন্য কিছু খাবেন।
(৭) জল খাবারের সময় এক গ্লাস কমলার রস খাওয়া যেতে পারে। আধঘন্টা পরে অন্য কিছু খাবেন।
কোষ্টকাঠিন্য রোগীর নিষিদ্ধ খাদ্য
কুপথ্য – খাবার সম্পর্কে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। গৃহীত খাদ্য পরিপাক ক্রিয়ার পর শরীর থেকে মল রূপে বর্জিত হয়। সুতরাং খাদ্যের সঙ্গে মনের সম্বন্ধ অঙ্গাঙ্গী।
অত্যাধিক ঝাল মসলা যুক্ত খাদ্য, বাজারের মুখরোচক খাবার, চা, কফি, মাছ, মাংস, ডিম ময়দার তৈরি খাবার, তেলেভাজা, পকোড়া, ফুচকা, মিষ্টি, কোকাকোলা জাতীয় ঠান্ডা পানীয়, ফ্রিজের জল, ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী কে বর্জন করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন খাওয়া, বেশি রাত করে না খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে না থাকার অভ্যাস করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে অবশ্য করণীয়
(১) খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। উত্তমরূপে চর্বিত খাদ্য এবং তার সঙ্গে মিশ্রিত লালা হজমে সহায়ক।
(২) খেতে বসে জল খাওয়া বারণ। খাওয়ার পর পর জল খাওয়াই হজমের পক্ষে ক্ষতিকারক। জল খেতে হবে খাওয়া শেষ হবার এক ঘন্টা পরে।
(৩) কখনো ভরপেট খাবেন না। সবসময়ই ক্ষুধা রেখে খাবেন। পূর্ণ খাদ্যগ্রহণের অন্তত: 4 ঘন্টা পরে পুনরায় খাবার খেতে হয়। এতে পাকস্থলী নিয়মিত তার কাজ করার অবকাশ পায়।
(৪) খাদ্যতালিকায় প্রতিদিনই যথাসম্ভব রান্না করা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে তাজা মরসুমি ফল, অঙ্কুরিত শস্য ছোলা ইত্যাদি বাড়াতে হবে। প্রাকৃতিক আহার্য হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
(৫) প্রতিদিন জল অন্তত: পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৬-৭ কেজি পান করা উচিত। আনুপাতিক হারে ছোটদের খেতে হবে। বেশি জল খেলে হজম শক্তি বাড়ে। প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। প্রস্রাব যত হবে, ততই শরীরের দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাবে।
(৬) রাত্রে কাঁসার অথবা মাটির পাত্রে জল রেখে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এতে পাকস্থলীর দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাবে।
(৭) রাতের খাবার প্রথম রাত্রেই খাওয়া উচিত অর্থাৎ সন্ধ্যার কিছু পরেই। শুতে যাবার অন্তত: ৩ ঘন্টা আগে খেতে যাওয়া উচিত। খেয়ে উঠেই বিছানা নিতে নেই। খাবার পর অন্তত: ১৫ মিনিট খোলা জায়গায় পায়চারি করা উচিত।
এসবই স্বাস্থ্যরক্ষার সাধারণ নিয়ম। এসব নিয়ম মেনে চললে, হজম শক্তি ঠিক থাকবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের কোন সমস্যা থাকবে না। শরীর সুস্থ ও সতেজ ও নিরোগ থাকবে।