মনকে প্রশন্ন রাখুন, উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকুন, আর সকাল অথবা বিকালে সম্ভব হলে দুই বেলাই আধঘন্টা খোলা হাওয়ায় ভ্রমণ করুন। উচ্চ রক্তচাপের বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়াম বা প্রাণায়াম অত্যন্ত কার্যকরী। ওষুধেও এতটা সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায় না।
মনকে উদ্বেগমুক্ত রাখার জন্য নিয়মিত শবাসন করা উচিত। এতে শরীর ও মনের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যথাযথ নিয়মে রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত শবাসন করা উচিত।
শবাসন
মাটিতে একটি চাদর বা কম্বল পেতে তার ওপরে লম্বালম্বি শুয়ে পড়ুন। দুই হাত শরীরের সমান্তরালে প্রসারিত করুন, করতল যেন উপরের দিকে থাকে। প্রলম্বিত পায়ের গোড়ালি পাশাপাশি সংলগ্ন থাকবে। এবারে সম্পূর্ণ শরীর কে শিথিল করে দিন। হাত, পা, পিঠ, কোমর, পেট, বুক, কাঁধ, গলা, মুখ ও মাথার মাংসপেশি সম্পূর্ণ ঢিলা করে দিতে হবে। শরীরের কোন অংশই শক্ত বা টান হয়ে না থাকে।সমস্ত শরীর শিথিল করার সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে,চোখকেও বিশ্রাম দিন।
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ধীরে ধীরে বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে ধীরে ধীরে প্রশ্বাস ছাড়বেন। মন থেকে সমস্ত চিন্তা ভাবনা দূর করে স্থির ভাবে শবের মত পড়ে থাকুন।এই হল শবাসন।
এইভাবে মিনিট 5- 7 মিনিট থাকার অভ্যাস করলে রক্তচাপের রোগীরা বিশেষ উপকার পাবেন। শবাসন ছাড়াও পদ্মাসন, ভুজঙ্গাসন, পর্বতাসন, বজ্রাসন, রক্তচাপ ও মানসিক উদ্বেগ থেকে রক্ষা করে থাকে ।
জেনে রাখা ভালো
আজকাল হাইপারটেনশন কথাটা খুব চালু হয়েছে। কথায় কথায় অনেককেই বলতে শোনা যায়, হাইপার টেনশনে ভুগছে। আসলেই রোগটির লক্ষণগত নাম হল ব্লাড প্রেসার।চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেটাই হলো হাইপার্টেনশন ।
অত্যাধিক মানসিক পরিশ্রম যারা করেন অথচ কায়িকশ্রম করেন না, তারাই উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগে আক্রান্ত হন। শরীরের ধমনী গুলি যখন ঠিকভাবে রক্ত সংবহন এর কাজ করতে পারেন না, তখনই দেখা দেয় এই রোগ।
রক্তের চাপকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত নির্ধারিত আহার এবং প্রয়োজনমতো বিশ্রাম ও দু-চারটি হালকা ব্যায়াম যথেষ্ট। এতেই সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়।
কিভাবে চলবেন, কি খাবেন
(১) সকালে বিকালে কয়েক মাইল খালি পায়ে হাঁটবেন।সকালে অন্তত: পনেরো মিনিট ঘাসের ওপরে হাঁটাচলা করবেন।তবে বর্ষায় অতীতে ঘাস ভিজে থাকে বলে,ওই সময় দেবেন।
(২) প্রতিটি গ্রাস খুব ভালো করে চিবিয়ে খাবেন।
(৩) খাওয়ার সময় জল খাবেন না।
(৪) সর্বদা মনকে প্রসন্ন রাখার চেষ্টা করবেন। উত্তেজনা এড়িয়ে চলবেন।
(৫) অমাবস্যা পূর্ণিমা বা একাদশীতে সম্ভব হলে একবেলা উপোস্ থাকবেন। সম্ভব না হলে পনেরো দিন অন্তর একদিন উপোস দেবেন।
(৫) গমের বাসি রুটি সকালে দুধে ভিজিয়ে খালি পেটে খাবেন।
লাউ, চালকুমড়ো, বেথো শাক, পালঙ,চৌলাইএর শাক, রসুন, পেঁয়াজ, টোম্যাটো, গাজরের স্যালাড ইত্যাদি শাকসব্জি প্রশস্ত।
ফলের মধ্যে চলবে লেবু, মুসম্বি, পেঁপে, আমলকি, তরমুজ, আপেল ইত্যাদি।
চলবে না
(১) বেশি পরিমানে ও বরাবর খাওয়া।
(২) দীর্ঘক্ষন এক জায়গায় বসে থাকা।
(৩) উত্তেজনা, অত্যাধিক ক্রোধ, আনন্দ, শোক, তাড়াহুড়ো ভাব।
(৪) ব্যাকুলতা, মানসিক চঞ্চলতা।
(৫) দ্রুত সিঁড়ি ভাঙ্গা, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা। বেগুন, আলু, ডাল, ময়দা, মিষ্টি, সাদা চিনি, চা, কফি, দুধ, মাখন, ভাজাজিনিস, লবন, আধপাকা কলা, কাঁঠাল, গুড়, তেল, ঝাল – মশলা, টক, গরু ও খাসির মাংস, মাছ, বিড়ি, সিগারেট, মদ ইত্যাদি মাদক দ্রব্য।
ঘরোয়া চিকিৎসা
(১) সমপরিমান আটা ও ছোলা নিয়ে আটা তৈরি করবেন। এই আটা না চেলে রুটি করে রোগীকে খেতে দিবেন। উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক হবে।
(২) গাছপাকা পেঁপে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এক মাস খেলে উচ্চ রক্তচাপ থাকবে না।
(৩) রাত্রে তামার পাত্রে রাখা জল সকালে খালি পেটে নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।
(৪) দুপুরে খাওয়ার পরে দইয়ের ঘোল একগ্লাস প্রতিদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
(৫) এক চামচ মেথি চূর্ণ সকালে ও রাতে মুখে দিয়ে জল খেতে হবে। 15 দিন খাওয়ার পরে উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক হবে।
(৬) দুটি নিমপাতা, চারটি তুলসী পাতা চিবিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। চিবিয়ে খাওয়া সম্ভব না হলে জলে পিষে নিতে পারেন। এতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।
রক্তচাপের রোগীর আহারের নিয়ম
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ২৪ ঘন্টা আগে ভেজানো গমের এক গ্লাস জলে একটি পাতিলেবুর রস ও একচামচ মধু মিশিয়ে খেতে দেবেন।
দুই ঘন্টা পরে দুটি রসুনের কোয়া সামান্য থেঁতো করে জল দিয়ে সেবন করতে দেবেন।
বেলা ৯-১০ টাই টাটকা সবজির রস খেতে দেবেন। গাজর, টোম্যাটো, শশা, লাউ ইত্যাদির জে কোনো একটির অথবাঁ সবগুলির মিলিত রস একটি বড় কাপে নেবেন। তার সঙ্গে সামান্য আদার রস ও ৪-৫ টি আমলকীর রস মিশিয়ে পান করতে দেবেন।
মনে রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীর পক্ষে লবন অত্যন্ত হানিকর। প্রয়োজনে খুব সামান্য পরিমান চলতে পারে।
দুপুরে খাওয়ার দের দুই ঘন্টা পরে লবন ছাড়া এক গ্লাস ঘোল বরাদ্দ রাখবেন।
দ্বিপ্রহরের বিশ্রামের পড়ে বেলা তিনটা নাগাদ টাটকা ফল বা
ফলের রস দেবেন। ফলের মধ্যে কমলা, মুসুম্বি, ডালিম বা বেদনা তরমুজ বা অন্য রসালো ফল প্রশস্ত।