রোগ-ব্যাধি দূর করতে প্রাণায়াম

প্রাণায়াম মানে প্রাণের আরাম বা বিস্তার, সহজ কথায় প্রাণবায়ুকে প্রাণায়ামের ক্রিয়ার দ্বারা অধিকমাত্রায় বায়ু শরীরে গ্রহণ করা যায়। শ্বাসের মাধ্যমে আমরা যে বায়ু গ্রহণ করি তার মধ্যে আমাদের শরীর গঠনের সমস্ত উপাদানই থাকে।

আমাদের দেহে অক্সিজেন প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। মানুষের শরীরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অক্সিজেন দ্বারা নির্মিত। ফুসফুসের শেষে সঞ্চিত বায়ু থেকে রক্তের লোহিত কণিকা অক্সিজেন গ্রহণ করে তা রক্তের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। এই অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত থেকে গঠিত হয় মাংস, মেদ, মজ্জা ও অস্থি। অক্সিজেন যুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত স্নায়ু কোষ ও মাংসপেশিকে সবল ও পুষ্ট করে।

এককথায় প্রাণায়ামে মানুষের জীবনি শক্তি বাড়ায় রোগ-ব্যাধি দূর করে দীর্ঘায়ু করে।

প্রাণায়াম এর প্রধান কাজ হল শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করা। তার ক্রিয়া হলো শ্বাস গ্রহণ, শ্বাস ধারণ ও শ্বাস মোচন। জক শাস্ত্রের ভাষায় এগুলিকে বলা হয় যথাক্রমে পূরক, কুম্ভবক ও রেচক।

পূরক হলো নিশ্বাসের সঙ্গে বায়ুর গ্রহণ।

কুম্ভক হলো গৃহীত বায়ুকে আটকে রাখা। চেরক হলো বায়ুকে শরীর থেকে বের করে দেওয়া।

শরীরে বায়ু কে আটকে রাখা বা কুম্ভক দুই প্রকার হতে পারে। বায়ু কে টেনে আটকে রেখেও হতে পারে আবার বাইরে ছেড়ে দিয়েও হতে পারে।

শ্বাস টেনে বায়ুকে ভেতরে আটকে রাখা কে বলা হয় আভ্যন্তরিক কুম্ভক এবং বায়ুকে বাইরে বের করে দিয়ে টেনে দম বন্ধ করে রাখাকে বলে বাহ্য কুম্ভক। অভ্যাসের দ্বারা এসব ক্রিয়া আয়ত্ত করতে হয়।

প্রাচীন ভারতে মুনি-ঋষিদের যোগসাধনা হত প্রাণায়াম ক্রিয়ার মাধ্যমে।এর দ্বারা তারা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে অসাধ্যসাধন করতেন। নিরোগ ও অটুট শরীর লাভ করতেন, এবং দীর্ঘায়ু হতেন।

বহু প্রকারের প্রাণায়াম এর মধ্যে শরীর রক্ষা ও রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে আমরা এখানে সহজসাধ্য দুটি প্রাণায়ামের উল্লেখ করলাম। এগুলি রোগী অথবা সুস্থ ব্যক্তি, সকলেই করতে পারবেন।

সহজ প্রাণায়াম( এক)

শরীরের রোগ আরোগ্যের জন্য সহজ প্রাণায়াম ও ভ্রমণ-প্রাণায়াম বিশেষ উপযোগী। সকলেই এগুলি নির্ভয়ে অভ্যাস করতে পারেন। আপনার সুবিধা মত যে কোন সুখাসনে মেরুদন্ড সোজা করে বসুন।এরপর উভয় নাক দিয়ে বুক ভরে বায়ু গ্রহণ করুন।বায়ু গ্রহণ শ্বাস নেওয়া শেষ হলে জলের স্রোতের ধারার ন্যায় অবিচ্ছিন্নভাবে মুখ দিয়ে সমস্ত বায়ু বের করে দিন।বায়ু ত্যাগ বা রেচক শেষ হলে পুনরায় দুই নাক দিয়ে বায়ু আকর্ষণ করে পুরক করতে হবে এবং আগের মতোই মুখ দিয়ে বের করে দিতে হবে।এই ক্রিয়াটি এভাবেই তিন মিনিট অভ্যাস করতে হবে।

উপকারিতা

এই প্রাণায়ামে ফুসফুসের যত ধুলো ময়লা জমে থাকে তার সমস্ত বেরিয়ে গিয়ে দোষ ত্রুটি দূর হয়ে যায়।ফুসফুস এমন সুস্থ ও সবল হয়ে ওঠে যে যক্ষার রোগ জীবাণু কখনো ফুসফুসকে আক্রমণ করতে পারে না।পাচক যন্ত্র ও যকৃতের সমস্যা দূর হয়, ফলে কোন প্রকার খোস -পাঁচড়া প্রভৃতি হতে পারে না। হয়ে থাকলে নিরাময় হয়।

প্রাণায়াম( দুই)

যেকোনো সুখাসনে বা চেয়ারে বসে ও এই ক্রিয়া অভ্যাস করা যায়। মেরুদন্ড সরল রেখে সোজা হয়ে বসতে হবে। এবারে দুই নাকে বেশ শব্দ করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন বা পূরক করুন। বায়ু টেনে নেওয়া শেষ হলে ধীরে ধীরে রেচক করতে হবে কিন্তু সজোরে ও সশব্দে। দুই নাকে বায়ু রেচন করার সময় চিবুক কান্ঠমূলের সংলগ্ন রাখতে হবে। শ্বাস গ্রহণ বা পূরকের সময় চিবুক তুলে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে হবে।

উপকারিতা

এই ক্রিয়া সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগ হবার ভয় থাকে না। অজীর্ণ রোগ দূর করে হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *