চোখের রোগ, ঘরোয়া চিকিৎসা ও চোখের যত্ন

চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই চোখ সম্পর্কে সকলেরই সচেতন ও সতর্ক থাকা কর্তব্য। চোখ ভালো রাখার প্রধান উপায় হলো রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো এবং সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা। শান্ত সবুজ বনানীর দিকে তাকালে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘদিন অক্ষুন্ন থাকে। বেশি আলো কখনোই চোখের পক্ষে ভালো নয়। আবার ক্ষীণ বা স্বল্প আলো চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। আজকাল টি.ভি সেট ঘরে ঘরে। শিশু বৃদ্ধ সকলেই সময় নেই অসময় নেই টি.ভি খুলে দেখতে বসে যায়। খুব কাছ থেকে বা সামনা সামনি বসে টি.ভি দেখা চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। রঙিন টি.ভি আরও মারাত্মক। বিশেষ করে শিশুদের পক্ষে।

অঞ্জনি

(১) হরিতকী, আমলা,বহেড়া এগুলো হলো ত্রিফলা। তিন গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণ গরুর দুধের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা দুইবেলা সেবন করতে হবে। দু – এক সপ্তাহ সেবন করলে অঞ্জনি ওঠা বন্ধ হবে।

(২) একটি দুটি তেঁতুলের বিচি কিছু সময় ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরে চন্দন পাতায় ঘষে অঞ্জনিতে লেপন করতে হবে।তেঁতুলের বিচির ভেতরের সাদা অংশ অঞ্জনি বা চোখের ফুসকুড়ির ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।

চোখ কর কর করা

সামান্য ফিটকিরির গুঁড়ো করে এক কাপ গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখলে কিছুক্ষণ পরে সেটা গুলে যাবে।সেই জল ড্রপার দিয়ে দুই ফোঁটা করে দিনে দুই-তিনবার চোখে দিতে হবে।চোখের যে কোন কষ্ট দূর হবে।

গোলাপ জলের অভাবে ফুটানোর ঠান্ডা জল বা ডিস্টিল ওয়াটার ব্যবহার করা চলবে।

চোখ – ওঠা

এটি খুবই বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক রোগ। ছোট-বড় সবারই এই রোগ হতে দেখা যায়। বিশেষ করে বসন্ত ও গির্শ ঋতুতে এ রোগ হতে দেখা যায়। এতে চোখ লাল হয়ে যায় ও ফুলে ওঠে। এর ভেতর সুচ ফোটানোর মত কষ্ট হয়।অনবরত চোখ দিয়ে জল পড়ে। চোখের পাতা ফেলতে কষ্ট হয়। চোখের পাতা চুলকায়। চোখের কোনে সাদা পিচুটি জমে। আলোতে চোখ খোলা যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ জুড়ে যায়, মাথা ধরে।

ঘরোয়া চিকিৎসা

(১) সবুজ ধনে পিষে রস বের করে কাপড়ে ছেঁকে দুই ফোঁটা করে চোখে দিতে হবে।এতে কষ্ট দূর হবে। চোখের যে কোন বিকারে ধনের পাতা খুবই উপকারী।

(২) গরুর দুধের সামান্য ফিটকিরি মিশিয়ে ঐ দুধে তুলো ভিজিয়ে চোখের ওপর বেঁধে রাখতে হবে। এতে চোখের লাল ভাব কেটে যাবে।

(৩) রাতে আখের গুড় এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ভালো করে কয়েকবার ছাঁকতে হবে। যত ভালো করে ছাকা হবে গুড়ের জল ততই ঠান্ডা হবে।এই জল পান করলে চোখ ওঠার কষ্ট লাঘব হবে।

চোখ লাল হওয়া

(১) লেবু টুকরো করে তার উপর সামান্য ফিটকিরির গুঁড়ো ছিটিয়ে পুলটিস তৈরি করে চোখের ওপর রাখলে চোখের লাল ভাব কেটে যাবে।

(২) তেঁতুল পাতার রস ও দুধ একসঙ্গে কাঁসার বাটিতে বা তোমার বাটিতে মিশিয়ে ঘুঁটে নিতে হবে। পরে আঙ্গুল দিয়ে নিয়ে চোখের পাতায় ও আশেপাশে লাগালে লাল ভাব কেটে যায়।

(৩) পেয়ারা পাতা পিষে পুলটিস তৈরি করে রাতে শোয়ার সময় চোখে বেঁধে রাখলে চোখের লাল ভাব কেটে যাবে, ফোলা,ব্যথা-বেদনা কমে যাবে।

চোখ দিয়ে জল পড়া

(১) পেয়ারা আগুনে পুড়িয়ে খেলে চোখ দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়।

(২) ধনে ও পুদিনার চা তৈরি করে সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

(৩) রাই মধুতে মিশিয়ে শুঁকলে চোখে জল পড়া বন্ধ হয়।

(৪) ছোট এলাচ দুটি গুঁড়ো করে রাতে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে চোখ দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়।

(৫) রাতে ভেজানো ত্রিফলার জল সকালে ছেঁকে নিয়ে চোখের ছিটা দিলে চোখ দিয়ে জল পড়া বন্ধ হবে।

(৬) সরষের তেলে রসুন এর একটা কোয়া ভেজে ওই তেল বুক গলা ও কানের চারপাশে মালিশ করলে দু দিনেই চোখ দিয়ে জল পড়া বন্ধ হবে।

চোখ জ্বালা করা

নানা কারণেই চোখে জ্বালা ভাব হতে পারে। তখন অনবরত চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। অনেক সময় চোখ উঠলে চোখে জ্বালা ভাব হয়।

(১) তেতুলের পাতা, হলুদ, ফিটকিরি সমপরিমানে নিয়ে পিষে পুলটিস করে চোখে দিতে হবে। এতে চোখের জ্বালা ভাব ও লাল হওয়া দূর হবে।

(২) আপেল উনানে সেঁকে সেটা চটকে নিতে হবে। তারপর পুলটিস তৈরি করে রাতে চোখের উপর বেধে রাখবেন।চোখের জ্বালা,ব্যথা ইত্যাদি দূর হবে।

(৩) গরুর দুধের মাখন চোখে লাগালে চোখ জ্বালা দূর হয়। চোখে লংকা লাগালে বা অন্যকোন রস পড়ে চোখের ভিতর জ্বালা ভাব হলে এতে অল্প সময়ে উপশম হবে।

চোখের জ্যোতি বাড়াতে

(১) পায়ের তলায় নিয়মিত তেল মালিশ করলে এবং স্নানের আগে পায়ের আঙ্গুলের নখের তেল ঘষলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।

(২) সকালে ও স্নানের সময় ঠান্ডা জল মুখ ভরে নিয়ে চোখে ঠান্ডা জলের ছিট্ দেওয়া অভ্যাস করলে কখনো চোখের রোগ হয় না।

(৩) গাজর ও টমেটো সস প্রতিদিন নিয়মিত আধ গ্লাস মাত্রায় সেবনে চোখের জ্যোতি বাড়ে। চোখের রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

কি করে চোখের যত্ন নেবেন

(১) অনেকক্ষণ অন্য কিছুর দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।

(২) পড়াশোনা করার সময় মাঝে মাঝে চোখ তুলে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে।

(৩) মাঝে মাঝে চোখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে পারলে ভালো।

(৪) সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ বনানী গাছপালা দেখা।

(৫) যথা সময়ে অন্তত: ছয় থেকে সাত ঘন্টা গভীর নিদ্রার অভ্যাস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *