সুস্থ থাকতে শরীরের কত ক্যালোরি খাদ্যের প্রয়োজন

(১) শরীরের তাপমান ও কার্যশক্তি রক্ষা করবার জন্যই খাদ্যের প্রয়োজন। শরীরের জন্য যতটুকু কার্যকরী শক্তি উৎ পাদক খাদ্যের প্রয়োজন তার একটা সাধারণ মাত্রা আছে। মোটামুটিভাবে একজন শ্রমশীল যুবকের পক্ষে 2800 ক্যালোরি পরিমান তাপ ও কার্যশক্তির প্রয়োজন। এই বেশী পরিমাণ তাপশক্তি কোন এক জাতীয় খাদ্য থেকে নিলে জিনিস এত বেশি খেতে হয় যে সে দ্রুত অন্যান্য গুনাগুন শরীরের প্রয়োজন অপেক্ষা অধিক হতে পারে এবং একই দ্রব্য দ্বারা অস্থি গঠন,মাংসপেশির সংরক্ষণ, মেদ বর্ধন প্রভৃতি কাজসমূহ হয় না। কাজেই নানা দ্রব্যের একত্রিত আহারই করা উচিত এবং এটাই যুক্তিযুক্ত।

(২) যার কর্ম যেমন তার খাদ্য ও তেমনই হওয়া আবশ্যক।একজন সাক্ষী প্রকৃতির লোকের ফলমূল চলতে পারে কিন্তু যাকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয় তার পক্ষে মাংস, মাংস ডাল প্রভৃতি রজ: গুণসম্পন্ন আহার না করলে চলবে কেন?

(৩) প্রসঙ্গত বলা যায় যে ভারতের অন্যান্য সকল জাতির মধ্যে পাঞ্জাবীদের আহার ও আহার পদ্ধতি সর্বোৎকৃষ্ট। তারা সাধারণত ডাল রুটি তরিতরকারির সঙ্গে দুধ বা দই রোজই খায়। জলবায়ু ও পরিশ্রমের গুনে এই আহারই তাদের শরীর বলিষ্ঠ ও উন্নত রাখতে সাহায্য করে। মাংস যে খেতেই হবে এ ধারণা ভ্রমাত্মক। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি ডাল রুটি পাঞ্জাবি দের মতো খেতে আরম্ভ করি, তাহলে সেটি আমাদের পক্ষে হিতকর হবে না কেননা সে রকম খাদ্য যেমন আমরা খেতে অভ্যস্ত নই তেমনি আমাদের জলবায়ু ঐরূপ আহার্য বস্তুকে পরিপাকে সাহায্য করবে না।

(৪) বাঙালিকে বাঙালির যা খাদ্য তাই খেতে হবে এবং সেটি তার পক্ষে সর্বাংশে উপযুক্ত হবে। তবে রন্ধন প্রক্রিয়া, দ্রব্য বিচার ও তার পরিমাণের ওপর অবশ্যই নজর রাখতে হবে।

নিচে একজন বাঙালি যুবকের দৈনন্দিন খাদ্যের একটি গড় হিসেব দেওয়া হল-

চাল 180 গ্রাম, আটা 300 গ্রাম, ডাল 90 গ্রাম, মাছ-মাংস 150 গ্রাম, আলু 180 গ্রাম, অন্যান্য তরিতরকারি 180 গ্রাম, ঘি 24 গ্রাম, সরষের তেল 24 গ্রাম, চিনি 30 গ্রাম এবং লবণ ও মশলা প্রয়োজনমতো।

*** যারা নিরামিষভোজী মাছ মাংসের পরিবর্তে তারা 500 গ্রাম দুধ বা 125 গ্রাম দই এবং অনুরূপ পরিমাণ ছানা ব্যবহার করবেন।

*** এটি দুবেলার খাদ্য, মেয়েদের পক্ষে এই পরিমাণের আট ভাগের এক ভাগ কম হিসাবে ধরতে হয়।

তবে ছোটদের ও যুবকদের, অর্থাৎ যাদের শরীর বাড়তির মুখে তাদের দুধ, ঘি, ও মিষ্টি একটু বেশি পরিমানে দিতে হবে।

*** মিষ্টি দ্রব্যের মধ্যে দুই বা একমাসের পুরানো সুগন্ধযুক্ত মধুই সর্বোৎকৃষ্ট। মধুর পরেই মিছরি, চিনি ও গুড়। বর্তমানে আমরা যে গুড় খাই তা শর্করা নামধারী বটে কিন্তু শর্করা নয়। এর দোষ অম্ল পাদন করা। চিনিও অহিত জনক। যদি এই চিনি জল সহযোগে সিদ্ধ বা পাক করে নেওয়া যায় তবে তা শুভকর হয়ে থাকে। কাঁচা চিনি কোন জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার কোন উপকার নেই। কদমা, বাতাসা বা ছানা সহযোগে প্রস্তুত দ্রব্যাদি খাওয়া যেতে পারে। পায়েস রান্নার সময় বাতাসা, কদমা, মিছরি প্রভৃতি অর্থাৎ পাক করা জিনিস দরকার হয় নচেৎ দুধ জল হয়ে যায়। মিষ্টি কাঁচা অবস্থায় খেতে হলে যে জায়গায় চিনি অপেক্ষা গুড়ই ভালো। কিন্তু সব রকম গুড়ো ভালো নয়। যে গুড় মদা মদা গন্ধযুক্ত নয় অর্থাৎ যাতে অম্ল রসের স্বাদ শুরু হয়নি তাই ভালো গুড় প্রকৃতিগত স্বাভাবিক গন্ধ যুক্ত হলে তাকে ভাল বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

*** এখানে আরো একটি কথা?- যুবকদের পক্ষে মাছ, মাংস, ডাল প্রভৃতি নাইট্রোজেনের প্রধান খাদ্য যতটা কার্যকর সাধারণত 50 বছর বয়সের পর ততটা কার্যকর হয় না। সে-বয়সে দুধ বা দুধ জাতীয় খাদ্যই বেশি প্রয়োজন।

*** মাছ মাংস ডাল প্রভৃতি দ্রব্য-সামগ্রী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রান্নার ফলে অম্লরস এর আধিক্য কমে গিয়ে তার গুণগত অংশটুকুই কাজে লাগে । ফলত, এটি কার্যকর হতে হজমশক্তিও দাঁতের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের স্বভাবতই হজম শক্তির হ্রস্বতা এবং দন্ত রাজির দূর্বলতা ঘটে থাকে। এই কারণে ওই বয়স দ্রব্যের পরিমাণ কমিয়ে এনে দুধের ভাগ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। নচেৎ শরীরের অপকার হবার সম্ভাবনা থাকে। কচি শিশুদেরও দুধ খাওয়াবার সময় ও মাত্রা ঠিক থাকা উচিত। শিশুদের মাতৃস্তন্য স্বাভাবিক খাদ্য। তার অভাবে গরুর দুধের ব্যবস্থা করাই শ্রেয়।

গরুর দুধে ঠান্ডা জল মিশিয়ে খাওয়ালে অনেক সময় শিশুর পাকস্থলীতে ওর দুধে চাপ মত হয়ে যেতে পারে এবং তাতে হজম শক্তির ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই গরুর দুধে ফুটন্ত জল মিশিয়ে চামচ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিলে ঐরূপ জমে যাবার আশঙ্কা কম থাকে। এই উদ্দেশ্যে বার্লির জল কিংবা চুনের জলের সঙ্গে গরুর দুধ মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। বয়স অনুসারে গরুর দুধ এই নিয়মে বা এরূপভাবে খাওয়ানো প্রয়োজন। তবে শরীরিক তারতম্যের বিচারে খাদ্যের পরিমাণেও তারতম্য হয়ে থাকে। ছাগলের দুধ সরাসরি আগুনের ওপর না চাপিয়ে প্রথমে একটি বড় বাটিতে বা কড়াতে জল দিয়ে একটি ছোট বাটির ভিতরে রেখে ফুটিয়ে নেওয়া সবচাইতে ভালো।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *