রোগারোগ্য ও বল বৃদ্ধিতে হরিতকী

শরীরের সমস্ত কর্ম ধারাকে স্বাভাবিক রাখতে হরিতকী একটি রসায়ন গুণসম্পন্ন ফল। হরিতকী শরীরের সপ্ত ধাতু শুদ্ধ ও পরিপুষ্ট করে। শরীরের শক্তি তেজ বৃদ্ধি করে। শরীরের সমস্ত সূক্ষ্ম কোষ সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে ফলে শরীরে বয়সোচিত জড়ার প্রভাব বিলম্বিত হয়।

হরিতকী মধ্যে সারক ও রসায়ন উভয়বিধ গুন বিদ্যমান।শরীরের সমস্ত প্রকার বিষাক্ত পদার্থ হরিতকী মলের মধ্য দিয়ে বের করে দিতে পারে।এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচন্ড।এ কারণে যারা হরিতকী নিয়মিত সেবন করে তারা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকে।

দেহের অভ্যন্তরের দূষিত পদার্থ ও মলের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন প্রকার রোগ আক্রমণ এর পথ করে দেয়। হরিতকী শরীরস্থিত দূষিত পদার্থ কে অন্ত্রের মধ্যে টেনে নিয়ে আসে এবং মলের সঙ্গে বাইরে বের করে দেয়।কিভাবে শরীর বিষমুক্ত ও শুদ্ধ হয়ে ওঠে।প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,হৃদয়,মস্তিষ্ক,পেট,রক্ত ইত্যাদির কাজ স্বাভাবিক ও নিয়মিত করে।

কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?

(১) হরিতকী খেতে হবে রাতে শোবার সময়। সপ্তাহে অন্তত একবার নিয়মিত হরিতকী চূর্ণ মুখে নিয়ে ঠান্ডা জল খেতে হয়। এতে শরীরে চর্মরোগ বলে কিছু হতে পারে না।

(২) হরিতকী চূর্ণ করে খেলে পেট পরিষ্কার হয়। চিবিয়ে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি হয়। ভাপে সেদ্ধ করে খেলে দাস্ত বন্ধ হয়। ভেজে খেলে বাত, পিত্ত, কফ নষ্ট হয়।

(৩) প্রতিদিন আহারের পর হরিতকী খেলে বল বৃদ্ধি হয়, মলমূত্র পরিষ্কার হয়, এছাড়া বাত, সর্দি, কফ বিকার, ফ্লু আরোগ্য হয়।

(৪) লবঙ্গের সঙ্গে হরিতকী খেলে কফ, মিছরি বা চিনির সঙ্গে খেলে পিত্ত, ঘি এর সঙ্গে খেলে বাত বিকার নষ্ট হয়, গুড়ের সঙ্গে খেলে ত্রিদোষ নাশ হয়।

(৫) বর্ষার সময়ে সৌন্ধব লবণের সঙ্গে,শরতে শর্করার সঙ্গে, হেমন্তে সুঠ সহযোগে, শীতে পিপুলের সঙ্গে, বসন্তকালে মধুর সঙ্গে এবং গ্রীষ্ম গুড়ের সঙ্গে হরিতকী চূর্ণ খাওয়া বিধেয় ।

(৬) বিষম জলে হরিতকী চূর্ণ খেতে হয় মধুর সঙ্গে, গুড়ের সঙ্গে খেলে অর্শ, অজীর্ণ, বাত শোধ ইত্যাদিতে উপকার হয়। মনাক্কার সঙ্গে খেলে জীর্ণ জ্বরে, গো মূত্রের সঙ্গে খেলে গোদ,দাদ,হাজা, চুলকানি ও পান্ডরোগে, রেড়ির তেলের সঙ্গে খেলে হার্নিয়া বা অন্ত্রবৃদ্ধি,আমবাত ইত্যাদিতেও উপকার হয়।চূর্ণ এক চামচ পরিমাণ খেতে হয়।

মনে রাখবেন, অত্যাধিক দুর্বল, উপবাসী, রোগা, রোগী প্রকৃতির মানুষ ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে হরিতকী চূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন।

(৭) প্রস্রাব করতে কষ্ট হলে, হরিতকী গুঁড়ো, একটু গাঁদাল পাতার রসের সঙ্গে আধ চামচ চিনি মিশিয়ে খেলে কষ্ট ভালো হয়ে যায়।

(৮)ঘাড়ে,পাজরে কিংবা কোমরের ব্যথায়,এক থেকে দেড় গ্রাম গোলমরিচ গুঁড়ো করে জলে মিশিয়ে, রোজ সকালে বিকালে কয়েকদিন খেলে শরীরে এই সব সুবিধা খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।

খুব শ্বাসকষ্টে, হরিতকীর গুঁড়ো মধু মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্টে আরাম মেলে।

(৯) খাদ্যদ্রব্য হজম করার ক্ষমতা কমে গেলে, খাবারের পর হরিতকী চিবিয়ে খেলে হজম ক্ষমতা বেড়ে যায়।

(১০) ফোঁড়া বা ব্রণ হলে চন্দনের সাথে হরিতকী ঘষে ওই ফোঁড়া কিংবা ব্রণর ব্যথা থেকে পাওয়া কষ্ট কমে যায়।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *