নেশা মুক্তিতে যোগ প্রাকৃতিক চিকিৎসা

নেশা বলতে এক কথায় বোঝায় কোন মাদক জাতীয় দ্রব্যের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা।এই ধরনের নির্ভরশীলতা নেশাগ্রস্থ রোগীর অবশ্যই থাকে। নেশা শুরু করার পিছনে নানা ধরনের কারণ থাকে যেমন – কোন ব্যক্তি কৌতুহলের জায়গা থেকে শুরু করে। আবার কেউ অর্থনৈতিক চাপে পড়ে করে, আবার কেউ আশাভঙ্গের জায়গা থেকে শুরু করে। সব কয়টির একটি বিশেষ কারণ থাকে। সবকয়টি সমস্যাই মানুষের জীবনের অঙ্গ। এগুলিকে মানুষ মানসিক দৃঢ়তার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ সমাজের আর্থসামাজিক বিষয়টি নেশাগ্রস্ত মানুষের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।

প্রাকৃতিক চিকিৎসায় নিয়মের জায়গা থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে মানুষের শরীর ও মনের উপর প্রকৃতির দৈনন্দিন প্রভাব আছে। আমরা অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে দেখছি যে, প্রকৃতি মুখি চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলি এই ধরনের সমস্যায় রোগীদের তুলনামূলকভাবে বেশি দিন নেশামুক্ত রাখে বা কখনো কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়।এর পরবর্তী ধাপ টি পুনর্বাসন। এই পুনর্বাসনের কাজটি সমাজে যদি ঠিকমতো করা যায় তাহলে নেশা মুক্ত জীবন তথা সমাজ গড়া সম্ভব। প্রকৃতি মুখী সমন্বিত চিকিৎসা বিষয়টিতে আসা যাক।

সমন্বিত চিকিৎসা কিভাবে মানুষের শরীর ও মনে প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে রোগী যখন অন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকে তখন নেশা করা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রোগীর শরীর ও মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সেসময় প্রাকৃতিক চিকিৎসা বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যেমন- পেটে মাটির পট্টি, কপালে মাটির পট্টি দেওয়া, (2) বারে বারে স্নান করানো. (৩) শুধু শিরদাঁড়া স্নান করানো কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট ঠান্ডা জলে। (৪) শিরদাঁড়ায় ম্যাসেজ করা এর ফলে রোগীর অস্থিরতা ও শারীরিক কষ্ট অনেক কম থাকে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে শরীরের ভিতরের প্রতিরোধক্ষমতা এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়। কখনও কখনও শবাসন করানো এবং রিলাক্সেশন করানো মূলতঃ অনাহত চক্র ও বিশুদ্ধ চক্র স্থানে বিশেষভাবে মনসংযোগ করতে হবে কারণ যোগের ভাষায় এই দুই চক্র শরীর ও মনের ভারসাম্য আনে। এইরকম অবস্থায় সাধারণভাবে রোগীর খাবার ইচ্ছা অনেক কম থাকে।

*** এইসময় মূলত হালকা স্যুপ জাতীয় খাবার দেওয়া বা সহজপাচ্য এবং শরীরের দুর্বলতাকেও কাটাতে সাহায্য করে। সাধারনত এই নেশাগ্রস্থ রোগীরা খুব বেশি তেল, ঝাল ও মশলা যুক্ত খাবার পছন্দ করে। এছাড়া রসালো ফল যেমন তরমুজ, আঙ্গুর, মৌসম্বি ইত্যাদি। এই প্রকৃতি মুখী চিকিৎসা করলে শরীরের নিজস্ব যে বেদনানাশক ক্ষমতা থাকে তাকে উজ্জীবিত করে ফলে রোগীর শরীরের যে সমস্ত ব্যথা-বেদনা হয় তা সহজেই কাটিয়ে সুস্থ হতে পারে।

*** যুগ চিকিৎসার ধ্যান বা ত্রাটক বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। মনকে শান্ত ও ধীরস্থির রাখে এবং সুস্থ চিন্তায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই ধরনের রোগী ধ্যান করানো বিশেষ প্রয়োজন এবং এর সাথে কিছু যোগাসন করানো।

এর সাথে আকুপাংচার চিকিৎসা ও যুক্ত করা হয়। যেমন কানে, হাতে পায়ে, মাথায় বিশেষ কয়েকটি বিন্দুতে সূচ ফুটিয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং অবস্থা অনুযায়ী সুচের ওপর মাস্কাও প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া প্রথম থেকেই কাউন্সেলিং করতে হয়, রোগীর মনের অবস্থা যাচাই করে তাকে সেই অনুযায়ী নেশা ছেড়ে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া।

পরিশেষে বলা যায় নেশা মুক্তির জন্য এই ধরনের সামগ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করলে তবেই নেশা মুক্ত জীবন বা সমাজ হওয়া সম্ভব। প্রকৃতির সাথে মানুষের আত্মিক যোগ জন্ম থেকেই। নেশাগ্রস্থ রোগীদের এই যোগাযোগ দুর্বল হয়ে যায় বা কখনো ছিন্ন হয়ে যায়।সমন্বিত প্রকৃতিমুখী চিকিতসা এই দুর্বল জায়গাকে সবল করে ফলে শরীরের নিজস্ব ক্ষমতায় বৃদ্ধি ঘটে ও সুস্থ হয়ে ওঠে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *