পান্ডুরোগেরই অন্য নাম কমলা রোগ। আজকাল জন্ডিস বললে আমরা সহজভাবে চিনতে পারি। এটি আসলে লিভার বাঁ যকৃতের রোগ।
কারণ : অনিয়মিত ও দুষ্পাচ্য খাদ্য খাওয়া, অত্যাধিক মিষ্টি খাওয়া, অতিরিক্ত মদ ইত্যাদি মাদকদ্রব্য গ্রহণ এই রোগের অন্যতম কারণ। খাদ্য ভালভাবে চিবিয়ে না খাওয়ার অভ্যাস থেকে যকৃতের রোগ দেখা দিতে পারে। ম্যালেরিয়া বা জ্বর জারিতে কুইনিন বা কড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তার প্রতিক্রিয়ায়, দূষিত জল ও খাদ্য থেকে এই রোগ হতে পারে।
লক্ষণ : এই রোগে রোগীর চোখ, মুখ, নখ, ত্বকে হলুদ ছোপ পড়ে, প্রস্রাব হলুদ হয়। চোখ মুখ জ্বালা করে। শরীর দুর্বল ও আশক্ত হয়ে পড়ে, খাওয়ার রুচি থাকে না, অনেক সময় জ্বর হতে দেখা যায়।
জন্ডিস রোগীর মুখে তেতো ভাব লেগে থাকে। পেটে গ্যাস হয়, মলের রং হয় হালকা হলুদ নয়তো ফ্যাকাশে। হাতে পায়ে ব্যথা হয়। কোন কাজে উদ্দীপনা থাকে না। সন্ধ্যার পরে মাথা ধরে, হঠাৎ হঠাৎ মাথাঘুরে উঠে, ঘুম কমে যায়।
পিত্তের আধিক্য থেকে এই রোগ হয় । পিত্ত রক্তে মিশে গেলে রক্ত দূষিত হয়ে যায়। অবিলম্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে যকৃত প্লীহা বেড়ে যায়।
ঘরোয়া চিকিৎসা
(১) সকালে ও বিকালে এক গ্লাস করে বাতাবি লেবুর রস খেলে জন্ডিস রোগ ভালো হয়।
(২) সকালে বাসি মুখে দুটি করে কমলার রস খেলে জন্ডিস দূর হয়।
(৩) অসত্য গাছের তিন-চারটি কচিপাতা সামান্য চিনি বা মিছরি মিশিয়ে ভালো করে পিষে মিহি করে নেবেন। পরে এক গ্লাস জলে গুলে ছেঁকে সরবত টা দিনে দুবার করে খেতে দেবেন। উপকার পাবেন। প্রয়োজনমতো তিন থেকে সাত দিন খেতে হবে।
(৪) ত্রিফলার জল, শসা, আখের রস রোগীকে খেতে দেবেন। জন্ডিস রোগীর পিত্ত ঠান্ডা রাখে এমন জিনিস রোগীকে খাওয়াতে হবে। খাবার হবে খুব হালকা ও সুপাচ্য। আলো বাতাস যুক্ত খোলা ঘরে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখবেন।
(৫) পুদিনার রসে মিছরি ও চিনি মিশিয়ে মিশিয়ে খেলে জন্ডিস রোগে উপকার পাওয়া যায়।
রোগীর পথ্য
আগেই বলেছি পিত্ত ঠান্ডা রাখে এমন খাদ্য ও পানীয় জন্ডিস রোগীকে দেবেন। ডাবের জল, কমলার রস, বেদানা বা ডালিমের রস, যবের সরবত, ঘোল, ছানার জল, মুলো পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। দুধ দেওয়া চলতে পারে তবে সমমাত্রায় জল মিশিয়ে তাতে একটি-দুটি পিপুল বা আধা চামচ পরিমাণ শুঁঠচূর্ণ সহযোগে গরম করে দেবেন।
শাক সবজির মধ্যে লাউ, ঢেঁড়স, পালং, টমেটো, পটল, পেঁপে, পুদিনা, ধনেপাতা, রসুন ইত্যাদি।
ফলের মধ্যে কমলা, মুসাম্বি, সবেদা, পেঁপে, খেজুর, বাতাবি, বেদানা, ডালিম,আঙুর, কিসমিস খাওয়া যায়।
জন্ডিস রোগীর খাবার দিতে হয় সতর্কভাবে।পুরনো চালের ভাত, যবের রুটি, আটার রুটি দিতে পারেন। মসুর, মুগ, অড়হড় ডালের পাতলা জলের সঙ্গে প্রয়োজনমতো গোলমরিচ ও বিটনুন মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখবেন, তেল মশলা লঙ্কা দেওয়া খাবার, টক বা টক জাতীয় কিছু জন্ডিস রোগীর পক্ষে বিষতুল্য।
রোগীর অপথ্য
ছোলা,বিউলির ডাল,ময়দার তৈরি খাবার, ভাজাভুজি, কেক ইত্যাদি বাদ। তেল, ঘি, হলুদ, গরম মশলা ও শুকনো লঙ্কা দেওয়া খাবার, মিষ্টি আলু, মেটে আলু, কচু, হিং, তিল, রাই ইত্যাদি বর্জন করতে হবে। মাছ,মাংস, ডিম,চা-কফি একদম চলবে না। কোন প্রকার মাদক নিষিদ্ধ। সবসময়ই টাটকা খাবার দিতে হবে। জল ফুটিয়ে পান করতে হবে।
রোগীকে কোনো পরিশ্রম করা চলবে না। রোদের ঘোরা, বেশি হাটাহাটি, আগুনের পাশে বসা চলবে না। রোগমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সহবাস বন্ধ রাখতে হবে।