কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে পেয়ারার প্রয়োজনীয়তা

 

বিখ্যাত ইংরেজি প্রবাদ বাক্যে বলা হয়েছে যে সারা দিনে একটি আপেল খেতে পারলে রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। ঠিক তেমনি এই কথাটি পেয়ারার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রথমে আলোচনা করে নেওয়া যাক। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ বলতে কী বোঝায়? মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে প্রতিদিন মলত্যাগ করা। এই স্বাভাবিক দৈনন্দিন ক্রিয়া যদি কোনো কারণে ব্যাঘাত ঘটে তখনই আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বলে থাকি। সারাদিনে আমরা যে খাদ্য খাই তার প্রয়োজনীয় অংশ শরীরের মধ্যে পুষ্টি আকারের থেকে যায় ও অপ্রয়োজনীয় অংশ শরীর বের করে দেয় মলত্যাগের মাধ্যমে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা বিশেষ জরুরী। কারণ আমরা এমন কিছু খাবার খাই যা শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কে কমজোরি করে দেয়। এক্ষেত্রে পেয়ারার বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রথমে আলোচনা করা দরকার পেয়ারার মধ্যে কি কি খাদ্য গুন আছে?

পেয়ারার খাদ্যগুণ বা পুষ্টিগুণ

*** পেয়ারার শাঁস ও দানাজাতীয় অংশে 81. 7 শতাংশ জলীয় অংশ,0.9 শতাংশ প্রোটিন,0.3 শতাংশ ফ্যাট এবং 0.7 শতাংশ খনিজ পদার্থ,11.2 শতাংশ কার্বোহাইড্রেট এবং ছিবড়া জাতীয় অংশে আছে 5.2 শতাংশ। খনিজ পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়ামও 10 মিলিগ্রাম শতাংশ এবং লোহা 1.4 মিলিগ্রাম শতাংশ আছে। এছাড়া পেয়ারা কে আমরা অনেকেই জানি যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে সেই কারণেই আলকির পরে পেয়ারা কে ধরা হয়। পেয়ারার শাঁস ও দানা জাতীয় অংশে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি আছে সেই কারণে পেয়ারাকে আমলকির পরে ধরা হয়।

পেয়ারার রোগারোগ্য ক্ষমতা : পাকা পেয়ারা শ্বাসের সাথে দুধ এবং মধু মিশিয়ে খেলে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। যা বাড়ন্ত বাচ্চাও গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা যোগাতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের পেয়ারা কিভাবে কাজ করে

*** পেয়ারা সাধারণত মল ত্যাগকে সহজ ও স্বাভাবিক রাখে। দৈনন্দিন 200 গ্রাম থেকে 300 গ্রাম পেয়ারা খেতে হবে জল খাবারের সাথে অথবা দুপুরে খাওয়ার পর, এর ছিবড়া জাতীয় অংশে অন্ত্রের প্যারিস্টলিক মুভমেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে ও স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

*** পেয়ারা আরও বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে যেমন হার্টের রোগ, দাঁত ও মাড়ির রোগ, ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, লিউকোরিয়া ইত্যাদি।

*** খালি পেটে পাকা পেয়ারা প্রতিদিন খেতে পারলে হার্টের রোগে বিশেষভাবে সাহায্য কারী ভূমিকা রাখে।

*** কাঁচা পেয়ারার মধ্যে টনিক, অক্সালিক ফসফরিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট বেশী পরিমাণে থাকে যা দাঁত মাড়ির পক্ষে বিশেষ উপকারী। এছাড়া দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া রোগে কচি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে রস দিয়ে পুরো দাঁত ও মাড়িতে প্রলেপ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাড়ি ফোলা ও ব্যথার ক্ষেত্রে পেয়ারা গাছের শিকড় অল্প পরিমাণে জলে ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে ধুলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

*** কাঁচা পেয়ারা ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ উপযোগী, কচি পেয়ারা এবং মাখন একসাথে মিশিয়ে খেতে পারলে সাধারণ ডায়রিয়া ডিসেন্ট্রির ক্ষেত্রে উপকারী।

*** কচি পেয়ারা পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে ভেজাইনাল ডুস দিতে পারলেই লিউকোরিয়া রোগের বিশেষ উপকারী এছাড়া এই পেয়ারা পাতার রস ভেজাইনার দেওয়াকে নরম করে।

ব্যবহার বিধি : কাঁচা বা পাকা যে পেয়ারাই হোক তা অবশ্যই টাটকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। পেয়ারার জ্যাম বা জেলি ঘরে তৈরি করে ব্যবহার করা যায় তাতেও প্রায় 60 থেকে 70 শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যাবে।

সামগ্রিকভাবে দেখলে বলা যায় যে, পেয়ারা খুবই সহজলভ্য ফল যার সাহায্যে বেশ কিছু জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের প্রত্যেককেই ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ফল বলতে আমরা অনেকেই বুঝি আপেল বা মৌসুম্বি কিন্তু সাধারণ ও সহজলভ্য ফলেও যে অনেক খাদ্য গুন আছে টা আমরা অনেকেই গুরুত্ব দিই না।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *