আধুনিক সভ্যতার বিশৃংখল জীবনযাত্রার অমোঘ পরিমাণ হল কোষ্ঠকাঠিন্য। আজকাল প্রায় সব মানুষকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে দেখা যায়।খাদ্যা খাদ্যের প্রতিক্রিয়ার ফলে এই রোগের উৎপত্তি।অর্থাৎ খাদ্য ঠিকমতো হজম না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়। এর থেকে শরীরে নানা রকম অসুখ-বিসুখ দেখা দিতে পারে।
আধুনিক জীবনযাত্রা কর্মমুখীন হয়ে পড়ায় ইদানিং সকলকেই এমন কর্ম ব্যস্ত থাকতে হয় যে ধীরেসুস্থে খাওয়াদাওয়ার সময় টুকুও পাওয়া যায় না। কোনরকমে উদরপূর্তি টুকু সেরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। এই ব্যস্ততার জীবনে প্রায় সময়ই প্রকৃতির ডাক অর্থাৎ মলত্যাগের বেগকেও উপেক্ষা করতে হয়।
মলত্যাগও প্রতিদিনের অন্য কাজ গুলির মতোই জরুরি,শরীর কর্মক্ষম রাখার অন্যতম প্রধান উপায়,একথা আমরা ভুলে যাই।
বাড়ির ছেলে মেয়েরাও পড়াশোনার চাপে রাত করে শুয়ে দেরি করে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়োর মধ্যে দিন শুরু করে। স্কুলে যাওয়ার তাড়ায় তারা সকালে নিয়মিত পায়খানা যেতে পারে না। ইচ্ছা থাকলেও উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়। এইভাবে সকলেই কম বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার হয়ে পড়েছে। পরে তার থেকেই নানান কঠিন রোগের কবলে পড়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দিনে দিনে যত বাড়ে, শরীরও ততই দুর্বল অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের পরিণামে অনিদ্রা, মাথা, চোখ ব্যথা, মাথা ঘোরা, পিঠ কোমর ব্যথা, চোখের নিচে কালি, রক্তাল্পতা, ক্লান্তি, আলস্য দেখা দেয়। স্মৃতিভ্রংশ ও অক্ষমতা আসে। নানা প্রকার চর্মরোগ, মুখে ঘা, ব্রণ ও চুলকানি, মেচেতা ইত্যাদির শিকার হতে হয়।
ক্ষুধা কমে যাওয়া, পেটে গ্যাস, চোখের তলায় কালি, মুখে দুর্গন্ধ, ঠোঁট ফাটা এসব কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।
অনেক সময়, ঋতু পরিবর্তনের কারণেও স্বাভাবিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। শীতের প্রকোপে অন্ত্র ও পাযুর মাংসপেশি সংকুচিত হওয়ার জন্য মল ঠিক ভাবে বাইরে বেরোতে পারে না। ফলের যাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো, হজমের কোন প্রকার গোলযোগ নেই তারাও কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার হয়ে পড়ে। শীতের সময় বিশেষ করে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়।
মেয়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য বিশেষ করে গর্ভবতী মেয়েদের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। এর ফলে গর্ভস্থ সন্তানেরও ক্ষতি হতে পারে। সন্তান গর্ভে এলে স্বাভাবিকভাবেই মায়ের গর্ভাশয়ের মাংসপেশীর নমনীয়তা কমে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে গর্ভাশয় এর মাংস পেশিতে চাপ বাড়ায় গর্ভস্থ সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশ ও পুষ্টি বিঘ্নিত হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে রক্তে বিষাক্ত গ্যাস মিশে দূষিত হয়ে যায়। গর্ভিনী মা এর দূষিত রক্তে গর্ভস্থ বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ হয় এবং এর ফলে দুর্বল শিশু জন্ম নেয়।
প্রতিকার
(১) ইসবগুলের ভুষির 2’চামচ 6 ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে সামান্য মিছরি মিশিয়ে খেলে পরিষ্কার হয়। ইসবগুল রাতে ভিজিয়ে রাখতে হয় এবং সকালে খালি পেটে খেতে হয়।
(২) মনাক্কা ভালো করে ধুয়ে, বীজ বের করে দুধে সেদ্ধ করে সকালে খেতে হবে। এতে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটি পর পর তিনদিন খেতে হবে। কোষ্ঠ সাফ হয়ে গেলে পরে মাঝে মাঝে খেলেই হবে।
(৩) রাতে শোয়ার আগে দু’চামচ ইসবগুলের ভুষি গরম দুধ অথবা জলে মিশিয়ে খেলে সকালে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে। ইসবগুলের ভুষি বয়স নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারে। কোষ্ঠ পরিষ্কারের জন্য এটি অত্যন্ত নিরাপদ উপকরণ।
অনেক সময় বদহজমের কারণে মলে আম দেখা দেয়। এই সময় দীর্ঘদিন ইসবগুল ব্যবহার করে উপকার পাবেন।
(৪) রেড়ির তেল কোষ্ঠ পরিষ্কারের একটি কার্যকরী জোলাপ।এটি রাতে শোয়ার সময় এক কাপ গরম দুধ বা জলের সঙ্গে খেতে হয়।
বড়দের ক্ষেত্রে২৫-৩০ ফোঁটা এবং ছোটদের ক্ষেত্রে ১০ ফোঁটা রেড়ির তেল জলে মিশিয়ে খেতে হবে।
রেডির তেল ব্যবহারের ফলে অন্ত্র বা পাকস্থলীর কোন ক্ষতি হয় না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত নিরাপদ। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
একটি স্থায়ী ওষুধ
১০ ব্রাহ্ম তো কালো হরিতকী ঘিয়ে ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে যখন হরিতকী ফুলে ওঠে ধোঁয়া উড়তে শুরু করবে তখন তা তুলে নেবেন। এরপর ১00 গ্রাম মৌরির অর্ধেকটা একইভাবে ঘিয়ে ভেজে তুলে নিয়ে বাকি অর্ধেক কাঁচামৌরির সঙ্গে মিশিয়ে নেবেন।
এবার ভাজা হরিতকী ও মৌরি আধ পেষা করে চূর্ণ করে নিন। আধ পেষা চুর্ণের মধ্যে হজমশক্তি অনুসারে ১00 গ্রাম বা ২00 গ্রাম ঘি ভালো করে মিশিয়ে একটা কাঁচের পাত্রে তুলে রাখবেন। এপি বায়ুনাশক ও কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি শক্তিশালী ওষুধ।
ব্যবহারবিধিঃ দুই চামচ প্রতিদিন সকাল সন্ধা দুইবেলা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। খাওয়ার 2 ঘণ্টা আগে ও পরে কিছু খাওয়া যাবেনা। এই ওষুধ পরপর 10 থেকে 15 দিন খেলে পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
এই চুর্ণ কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও কৃমি, গ্যাস এবং আমাশয় নিরাময় করে।এটি হার্ট বলিষ্ঠ করে। বছরের সব ঋতুতেই ব্যবহার করা চলে।