কলেরা রোগের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

নাম শুনলেই আতঙ্ক জাগে। এই প্রাণঘাতী রোগের প্রকোপে একসময় মড়ক লেগে গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। রোগটি সংক্রামক। তাই যথা সময়ে সঠিক চিকিৎসা সাবধানতার অভাবে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত। মাছি কলেরা রোগের বাহক।

লক্ষণ : এই রোগের শুরুতে রোগীর হাত পায়ের আঙুলে আড়ষ্ট ভাব হয়। গিঁটে গিঁটে ব্যথা হয়। পরে এই ব্যথা শরীরে অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রস্রাব কম হতে থাকে, গারো হলুদ প্রস্রাব হয়, জিভ সাদা হয়ে যায়, অত্যন্ত তৃষ্ণা পায়। জল খেলেই বমি ও দাস্ত হয় । রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় চাল ধোয়া জল এর মত দাস্ত ও বমি হয়। হাত পায়ের আঙ্গুল নীল হয়ে যায়। শরীরের চামড়া জড়ো -জড়ো হতে থাকে। এসময়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

কারণ : পচা বাসি খাবার খাওয়া, পচা মাছ খাওয়া, নোংরা জলপান, অত্যাধিক গুরুপাক খাদ্য খাওয়া এবং সর্বদা পেট ভর্তি করে বেশি পরিমাণে খাওয়া – এসব কারণ থেকে কলেরা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শহরে বা গ্রামাঞ্চলে খোলা খাবার, পচা ফল ইত্যাদি দারাও কলেরার রোগ জীবাণু সংক্রমিত হয়।

উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে না পারলে অল্প সময়ের মধ্যে রোগ মহামারীর আকার ধারণ করে।

আহার জনিত অর্থাৎ অতিভোজন বা কু -খাদ্য ভক্ষনে শুষ্ক কলেরাও হতে দেখা যায়। এতে রোগ লক্ষণ কলেরার মতোই থাকে। তবে বমি বা দাস্ত হয়না।শুষ্ক কলেরা ও যথেষ্ট বিপদজনক।

ঘরোয়া চিকিৎসা

(১) রোগের প্রথম অবস্থায় অর্থাৎ কলেরার লক্ষণ দেখা দেয় মাঝেমাঝে পেঁয়াজের রসে এক রতি পরিমাণ সামান্য হিং মিশিয়ে আধ ঘন্টা অন্তর রোগীকে সেবন করালে উপকার হয়।

(২) ১০০ গ্রাম তেলে একটা জায়ফলের চূর্ণ অল্প আঁচে ভাল করে ভেজে নিতে হবে। এই তেল রোগীর হাতে ও পায়ে মালিশ করলে ব্যথা-বেদনা দূর হবে।

(৩) ১০ গ্রাম কর্পূর,১০ গ্রাম খয়ের,৫ গ্রাম হিং,১0 টি কচি নিমপাতা তুলসীর রসে মিশিয়ে মটরের দানার মতো ছোট ছোট গুলি তৈরি করে নিন। এই গুলি একই করে গোলাপের আরকের সঙ্গে দিনে ৩-৪ বার রোগীকে খাওয়াবেন।

(৪) আজমোদের কয়েকটি পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে পিষে রস বার করে বারো চামচের এক চামচ পরিমান এক ঘন্টা অন্তর সেবন করাবেন। এতে দাস্ত ধরে আসবে। মল একটু ঘন হয়ে এলে দু – চামচ করে দিয়ে যেতে হবে। এতে অল্প সময়েই কোলেরার প্রকোপ প্রশমিত হবে।

(৬) কলেরার উপকার পাবার জন্য চিনি বা বাতাসার সঙ্গে দু -তিন ফোঁটা লবঙ্গের তেল মিশিয়ে খেতে দেবেন।

পথ্য: কলেরা রোগীকে ভালো মতো খিদে না পেলে খেতে দেবেন না। গরম ও টাটকা খাবার দেবেন। খাবারের সঙ্গে পুরোনো পাকা তেঁতুল, কাগজি লেবুর রস, পুদিনা, পেঁয়াজ খেতে দেবেন।

বাজারের নোংরা খাবার, আঢাকা খাবার, না ফোটানো জল কোনো অবস্থাতে দেবেন না।

বাড়ির ব্যবহার্য জলে বাঁ কুয়ো থাকলে কুয়োতে পটাশিয়াম দেবেন। রোগীর বমি, মলমূত্র মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দিন যাতে মাছি বসতে না পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *