সাপে কাটার প্রাথমিক চিকিৎসা

সাপের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রথমেই একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে সব ছাপিয়ে বিষাক্ত নয়। নির্বিষ সাপের সংখ্যা বেশি। কিন্তু যেহেতু আমরা জানি না নির্বিষ কি বিষাক্ত সাপে দংশন করেছে, তাই সাপে কাটা রোগীর সম্পর্কে অত্যন্ত তৎপর হতে হবে। কিন্তু খুব বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না। ঠান্ডা মাথায় সুস্থিরভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাপে কাটলে সর্বপ্রথম কর্তব্য হলো দংশনের জায়গায় দু চার আঙুল উপরে দড়ির বাঁধন দেওয়া।এরকম কয়েক আঙ্গুল তফাত দু-তিনটি বাঁধন দিতে হবে।এতে রক্তের গতিরোধ হয়ে বিষ শরীরে ছড়াতে পারবেনা।তারপর অবিলম্বে রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হবে।কোন অবস্থাতেই রোগীকে ফেলে রাখবেন না।বাধন দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন না।দেরি হলে বিষক্রিয়ায় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

প্রাথমিক কর্তব্য

(১) সাপে কামড়ালে দংশনের জায়গার একটু উপরে দড়ির বাঁধন দিতে হবে।৩-৪ আঙ্গুল ব্যবধানে এভাবে আরও দুটি বাঁধন দেবেণ।

(২) সাপের কামড়ের জায়গায় যদি বাধন দেওয়ার সুবিধা না থাকে তাহলে দেরি না করে দংশনের জায়গায় জ্বলন্ত কয়লা রেখে জায়গাটা পুড়িয়ে দিতে হবে। ইতস্তত করলে হবে না। পুড়িয়ে দিতে না চাইলে, দংশনের জায়গার ছাল একটু তুলে গরম লোহা ছ্যাকা দিতে হবে।এসব খুবই কষ্টকর কাজ সন্দেহ নেই,কিন্তু রোগীর স্বার্থে এই প্রাথমিক কর্তব্যগুলো করতে হবে,

(৩) সাপের দংশন এর জায়গায় সাপের দাঁতের দাগ থাকে। বাধন দেওয়ার পরই দংশনের জায়গাটা একটা ধারালো ছুরি বা ব্লেড লাল করে পুড়িয়ে বা ডেটল অথবা ফিটকিরি দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে যোগ (+) চিহ্নের মতো করে চিরে দিন।ওই জায়গা থেকে বিষাক্ত রক্ত বেরুতে থাকবে।জায়গাটা আঙুল দিয়ে টিপে টিপে রক্ত বের করে দিতে হবে।রক্তের সঙ্গে শরীর থেকে বিষও বেরিয়ে আসতে পারে।

(৪) ছুরি বা ব্লেড দিয়ে দংশনের জায়গা চিরে দেবার পর টিপে টিপে রক্ত বের না করে খানিকটা গোটা চুণ চেপে ধরলেও চুন বিষযুক্ত রক্ত টেনে নেবে।

সাপে কাটা রোগী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি দংশনের জায়গায় চিরে বা খুঁচিয়ে ক্ষতের ওপর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর দানা ভালো করে গুড়ো করে চেপে লাগিয়ে দেন।

(৫) সাপে কাটা রোগী কে ঘুমাতে দেবেন না। ঘুমোলে রক্তের সাথে মিশ্রিত বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।রোগীকে অন্তত: 12 ঘন্টা যেভাবে হোক জাগিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বারবার চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিতে হবে এবং রোগীকে শুইয়ে না রেখে বসিয়ে রাখতে হবে।এই সময় ভুল করেও রোগীকে এমোনিয়া শুকতে দেবেন না, হুইস্কি বা ব্র্যান্ডি পান করাবেন না।

ঘরোয়া চিকিৎসা

(১) পেঁয়াজের রস ও সরষের তেল প্রত্যেকটি 30 গ্রাম করে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সাপে কাটা রোগী কে পান করতে দেবেন। আধঘন্টা পর পর ওই মিশ্রণে একই পরিমানে পান করাতে হবে।সাধারণত: তিন মাত্রা দেবার পর আর দরকার হয়না।এপি দংশিত ব্যক্তির শরীরে সাপের বিষের জ্বালা,অস্বস্তি,অস্থিরতা কমবে।

(২) সাপের কামড়ের জায়গায় সঙ্গে সঙ্গে 50 গ্রাম খাঁটি গাওয়া ঘি এর সঙ্গে এক গ্রাম ফিটকারি মেড়ে লাগালে বিষের ক্রিয়া নষ্ট হয়।

(৩) রোগীকে অড়হরের শেকড় চিবিয়ে খেতে দেবেন এতে বিষ প্রশমিত হবে।

(৪) সাপে কাটা রোগী কে সঙ্গে সঙ্গে একশো -দেড়শো গ্রাম বিশুদ্ধ ঘি খাইয়ে দেবেন।বমি হলে শরীরে বিষের প্রভাব অনেকটা কম হয়। ঘি খাওয়াবার ১0-১৫ মিনিট পরে ঈষৎ উষ্ণ জল পরপর বড় গ্লাসের দুই গ্লাস পান করাবেন। এতে আবার বমি হবে।এভাবে কয়েক বার বমি করলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

(৫) অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সাপে কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে মূত্র পান করালে সাপের বিষ নষ্ট হয়।দশ-বারো বছরের সুস্থ ছেলেদের মূত্র হলেই ভালো।তবে অভাব হলে পরিবারের অন্য কোন নিরোগ সদস্যের মূত্র পান করানো যেতে পারে।২0-২৫ মিনিট অন্তর অন্তর এক কাপ মাত্রায় কয়েকবার পান করাতে হবে। মূত্র পানের পাশাপাশি দংশিত স্থানে মুত্র ভেজানো কাপড়ের পটি দিতে পারলে বিষাক্ত সাপে দংশন করলে ও রোগীর প্রাণের আশঙ্কা থাকে না।

এলোপ্যাথি মতে ও এখন মূত্র চিকিৎসা হয়। ইউরোফিনেস ইনজেকশন মূত্র থেকে তৈরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *