ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ থেকে সহজেই মুক্তি

প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিস বা মধুমেহকে কোনো রোগ বলা চলে না। এটি মূলত: শরীরের পাচন যন্ত্রের আব্যবস্থা থেকে দেখা দেয়। যারা কায়িক পরিশ্রম করে না, শরীরের ব্যায়াম করে না অথচ ভোগ – বিলাস পূর্ণ জীবনযাপন করে প্রধানত তাঁদের এই রিগ দেখা যায়। নিয়মিত যারা পরিশ্রম করে অর্থাৎ খেতে খাওয়া মানুষ যারা তাদের এই রোগ খুবই কম হতে দেখা যায়।

চল্লিশ বছর বয়সের পর। যুবক বয়সেও এ রোগ হতে দেখা যায়। অনেক সময় বাচ্চাদেরও ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। তবে বংশগত কারণেই এমন অস্বাভাবিক অবস্থা হয়ে থাকে।

রক্তের মধ্যে যদি শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে টা যকৃত বা কিডনি তে ঘন মাড়ের মতো জমা হয়। প্রয়োজন মতো এটি আবার শর্করায় সঞ্চিত হওয়া বা পরিবর্তিত হাওয়ার কাজ ঠিকমতো না হলে শরীরের কোষসমূহে শর্করা সরবরাহ হতে পারে না এবং কোষগুলি শক্তির অভাবে দুর্বল হয়েছে পড়ে।এই অবস্থায় মধুমেহ রোগ দেখা দেয়।

রোগ লক্ষণ

মধুমেহ রোগে ঘন ঘন জল পিপাসা পায় অধিক পরিমানে মূত্র হয়। তীব্র খিদে হয়, কিন্তু খেলেও শরীরে দিনে দিনে শুকিয়ে যেতে থাকে। শরীরের ওজন কমে যায়। মূত্রে সুগার পাওয়া যায়। মিষ্টি গন্ধ যুক্ত হয়। প্রস্রাবর রং হয় হোলুদ ও টা অ্যাসিডযুক্ত। সব সময় শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি বোধ হতে থাকে। ত্বকে চুলকানি হয়। যৌন উত্তেজনা কমে যায়।

ঘরোয়া চিকিৎসা

(১) জামের বিচীর শাঁস সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। বিচী শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখতে হবে। প্রতিদিন ৩ গ্রাম করে সকালে ও বিকালে জল সহযোগে খেতে হয়। গুঁড়ো মুখে দিয়ে জোক খেতে হবে। এই যোগ দু তিন সপ্তাহ খেলে মধুমেহ দূর হয়।

( 2) তাজা কোমল জামের পাতা মিহি করে বেটে ৬০ গ্রাম জোকে নেড়ে নিতে হবে। পড়ে ছেঁকে ওই জল নিয়মিত দুই সপ্তাহ খেতে দেবেন। দুই মাস পর আবার দশ দিন খেতে হবে। এতেই প্রস্রাবের সুগার দূর হবে।

(৩) রোগ ধরা পড়ার পড়ে ৪-৫ টি করে কচি জাম পাতা সকালে বিকালে চিবিয়ে খেলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

(৪) জামের মরসুমে ৫0-৬0 গ্রাম পাকা জাম ৩00 গ্রাম ফুটন্ত জলে ফেলে কিছুক্ষন ঢেকে রাখতে হবে। জলে ভিজে জাম গুলো ফুলে তুলতুলে হয়ে যাবে। ওই অবস্থায় জামগুলো জলে কচলে ছেঁকে নিতে হবে। এই জামের জল তিনভাগ করে দিনে তিনবার খেতে হবে। এইভাবে কিছুদিন খেলে প্রস্রাবে সুগার কমে মধুমেহ আরোগ্য হবে।

(৫) ১ চামচ মৌরি ও দু চামচ মেথি মিশিয়ে এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ওই জল সকালে কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে রোগীকে খেতে দেবেন। দুইদিন অন্তর দুই সপ্তাহ খেলে মধুমেহ ভালো হবে।

কিছু পরামর্শ

মধুমেহ রোগীদের নিরামিষ আহারই উপযুক্ত। খাওয়া দাওয়া নির্দিষ্ট রাখতে হবে, টাটকা শাকসবজি, ফলফলারি, শাঁসজাতীয় খাদ্য ইত্যাদির মধ্যে। কাঁচা তরকারি, ফল, সবজির রসও খাওয়া যেতে পারে। খাদ্য যথাসম্ভব পুষ্টিকর হওয়া চাই। কম করে বারে বারে খেতে হবে। মত কথা খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে কঠোর ভাবে সংযমী হতে হবে।

খাদ্য তালিকাটি এরকম হলে ভালো হয় – শাকসবজির মধ্যে, সবুজ পাতাযুক্ত শাক যেমন – বে, পুদিনা, ধনে , চৌলাই, সবজির মধ্যে, বাঁধাকপি, কাকড়ি, লাউ, করলা, মুলো, গাজর, পেঁয়াজ, টোম্যাটো ইত্যাদি। এছাড়া টাটকা ফল, নারিকেল, জাম, লেবু, ভেজানো বাদাম, আদা কুচি, বেলপাতা, ইত্যাদি মধুমেহ রোগীর পক্ষে উপকারী।

(১) কাঁচা করলার রস মধুমেহ রোগের মোহঔষধ। এতে রক্তের সুগার অংশ দ্রুত কমে যায়। করলা তরকারির সঙ্গে ভেজে খেলেও কাজ হয়।

(২) মিষ্টি ফল, ভাত, বিড়ি – সিগারেট নিষিদ্ধ।

(৩) দুপুরে ঘুমানো অভ্যাস থাকলে বন্ধ করতে হবে। দিবা নিদ্রা সুস্থ মানুষের পক্ষেও হানিকর।

মধুমেহমান রোগে গ্যাস হাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ক্ষমতাঅনুসারে কায়িক শ্রম করতে হবে। এতে হাজমের কাজ স্বাভাবিক থাকবে। বদ হজম হলে বিপদ।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা

(১) প্রতিদিন সকালে কয়েক মাইল হাঁটতে হবে। সম্ভব হোকে ধীরে ধীরে দৌড়াতে বলবেন। এর ফলে কোনো ওষুধ চড়াই মধুমেহ নিরাময় হবে।

(২) দুই বেলা শরীরে খাঁটি সরষের তেল মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায়।

( ৩) যবদানা ভেজে পিষে আটা তৈরি করে রুটি ভেজে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

(৪) ছোলার আটার রুটি কিংবা ছোলার আটা ও যবের আটা মিশিয়ে রুটি তৈরি করে চারগুন সবজির সঙ্গে নিয়মিত খেলে প্রসাবে সুগার বন্ধ হয়ে যাবে।

(৫) রুটি যেমনই হোক, তার সঙ্গে প্রচুর পরিমানে শাক – সবজি খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *